বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সংস্কৃতিতে মিল ও অমিল

ধরুন, আপনি সদ্য রাশিয়ায় এসেছেন। নতুন দেশ, নতুন ভাষা, নতুন পরিবেশ। মনে হচ্ছে সবকিছুই যেন আলাদা! কিন্তু ধীরে ধীরে খেয়াল করবেন, কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমাদের দেশের মতোই—মনে হবে, "আরে! এটা তো আমরাও করি!" আবার এমন কিছু জিনিসও আছে, যা আপনাকে অবাক করে দিতে পারে।

এই ব্লগে আমরা দেখে নেব রাশিয়া ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির কিছু মজার মিল ও অমিল—যা একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বা পর্যটক হিসেবে আপনাকে জানতে সাহায্য করবে।

পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক আচরণ

বাংলাদেশে পরিবার মানেই একসাথে থাকা, একে অপরের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়া। অভিভাবকরা সিদ্ধান্তে বেশি ভূমিকা রাখেন, ছোটরাও বড়দের সম্মান করে চলে।

রাশিয়াতেও পারিবারিক বন্ধন গুরুত্বপূর্ণ, তবে এখানকার তরুণরা অনেক ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনভাবে চলাফেরা শুরু করে। ১৮ বছরের পর থেকেই তারা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চায় এবং আলাদা থাকা শুরু করে।

তবে একটি বড় মিল হলো—দুই দেশেই মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা গভীর।

আতিথেয়তা: মেহমানের প্রতি মনোভাব

বাংলাদেশে যদি কেউ বাড়িতে আসে, তখন চা-নাশতা না খাইয়ে বিদায় দেওয়া যেন অসম্ভব। এখানকার মানুষজন অতিথিপরায়ণ এবং আন্তরিক।

রাশিয়াতেও আতিথেয়তার সংস্কৃতি আছে, তবে সেটা একটু ভিন্নরকম। প্রথমবার কেউ গেলে খুব একটা খোলা মনের অভ্যর্থনা নাও পেতে পারেন, কিন্তু একবার যখন সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তখন তারা সত্যিই আপন করে নেয়। ঘরে ডাকলে নিজ হাতে রান্না করা খাবার, চা, আর গল্প—সবকিছুতেই আন্তরিকতা থাকে।

খাবার ও খাওয়ার রীতি

দুই দেশের খাওয়ার ধরণে কিছু মিল থাকলেও বেশ কিছু পার্থক্যও আছে। বাংলাদেশে ভাত, মাছ, ডাল, মসলা ও তেলযুক্ত খাবার বেশি প্রচলিত। দুপুরের খাবারকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। বেশিরভাগ পরিবারেই সকালের নাস্তা তুলনামূলক হালকা, আর রাতের খাবার হয় সাধারণ।

রাশিয়ান খাবারে রয়েছে স্যুপ, স্যালাড, রুটি, মাংস এবং দুধ বা দুধজাত খাবার। ওদের প্রধান খাবারগুলোর মধ্যে বোরশ (চালানো বিট স্যুপ), পেলমেনি (ডাম্পলিং), ওলিভিয়ে সালাদ ইত্যাদি খুব পরিচিত। রাশিয়ায় খাবারের আগে "প্রিয়াটনাভা আপেটিতা" (সুস্বাদু খাবার কামনা) বলা হয়, যা বাংলাদেশে "বিসমিল্লাহ" বলার মতোই একটি ভদ্রতা।

ভাষা ও অভিব্যক্তি

বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত প্রাণবন্ত, আবেগপ্রবণ ও খোলামেলা অভিব্যক্তির মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে। বাংলায় "আপনি", "তুমি", "তুই" ইত্যাদি শ্রেণিবিন্যাস আছে, যেটা সম্পর্ক অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়।

রাশিয়ান ভাষাতেও "вы" (আপনি) ও "ты" (তুমি) ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা ও সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বোঝানো হয়। রাশিয়ানরা সাধারণত নতুন পরিচয়ে একটু সংরক্ষিত থাকে, তবে একবার সম্পর্ক গড়ে উঠলে খুব আন্তরিক হয়ে ওঠে

পোশাক ও চলাফেরা

বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেমন—সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, শাড়ি এখনো ব্যাপক প্রচলিত, বিশেষ করে উৎসব বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। তবে শহরাঞ্চলে পশ্চিমা পোশাকের ব্যবহার বাড়ছে।

রাশিয়াতে মানুষ সাধারণত আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পরে। শীতকালে ঘন লোমশ জ্যাকেট, স্কার্ফ, হ্যাট ইত্যাদি পরা খুবই সাধারণ। গ্রীষ্মে হালকা পোশাক পরে তারা। সেখানকার ফ্যাশন সাধারণত পরিপাটি এবং প্রায়শই রুচিশীল, তবে ব্যক্তি স্বাধীনতাও প্রবল।

ধর্ম ও ধর্মীয় অনুশাসন

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংস্কৃতি খুবই প্রভাবশালী। ইসলাম প্রধান ধর্ম হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষও এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেন। ধর্মীয় উৎসব, রীতিনীতি এবং পরম্পরা সামাজিক জীবনের একটি অংশ।

রাশিয়া একটি সেকুলার দেশ হলেও রুশ অর্থডক্স খ্রিস্টধর্ম দেশটির প্রধান ধর্ম। এছাড়াও মুসলিম, বৌদ্ধ এবং ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি রয়েছে। ধর্মীয় উৎসবগুলো যেমন—ইস্টার বা ক্রিসমাস—রাশিয়ান সংস্কৃতিতে বিশেষভাবে পালিত হয়, যদিও ধর্মীয়তা অনেকাংশেই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়।

উৎসব ও বিনোদন

বাংলাদেশে ঈদ, পূজা, নববর্ষ, পহেলা ফাল্গুন ইত্যাদি উৎসবের সময় মানুষের মধ্যে আনন্দ ও মিলনমেলা তৈরি হয়। রাস্তাঘাট, মেলা, খাবারের দোকান, গান-বাজনা—সব মিলিয়ে উৎসবগুলো জমজমাট হয়।

রাশিয়ায় অন্যতম উৎসব হলো নিউ ইয়ার ও ক্রিসমাস। এছাড়া মাসলেনিৎসা নামক বসন্তবরণের উৎসব, যেখানে মানুষ ব্লিনি (প্যানকেক) খেয়ে আনন্দ করে, বেশ জনপ্রিয়। রাশিয়ার অনেক উৎসব প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত, এবং সেগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে।

বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক গড়ে তোলা

বাংলাদেশে পরিচয় একটু হলেই বন্ধু হয়ে যাওয়া যায়। একসাথে ক্লাস, খেলা, কাজ করলে একদিনেই বন্ধুত্ব জমে ওঠে।

রাশিয়ায় বন্ধুত্ব গড়ে তোলা একটু ধীরগতির হলেও অনেক গভীর। তারা বিশ্বাস করতে একটু সময় নেয়, কিন্তু একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে তা অনেক মজবুত হয়।

আপনি যদি রাশিয়ায় পড়াশোনা করেন বা কাজ করেন, তাহলে এই সম্পর্কগুলোই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠবে।

শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্রজীবন

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় কাঠামোগত পার্থক্য থাকলেও ছাত্রজীবনে কিছু অভিন্ন দিক রয়েছে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার প্রবণতা রয়েছে।

রাশিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত এবং কারিকুলাম নির্ধারিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণত নিজের পছন্দমতো বিষয় পড়ে, এবং বেশি স্বাধীনতা পায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রাশিয়া এখন অনেক জনপ্রিয় গন্তব্য।

ভিন্নতা মানেই নতুন শেখার সুযোগ

বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সংস্কৃতির মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে—খাবার, পোশাক, ভাবনা, অভ্যাস। কিন্তু এই পার্থক্যের মাঝেই লুকিয়ে আছে শেখার অজস্র সুযোগ।

Russian On The Go-এর মতো সংগঠন এই সংযোগ গড়ে তোলার কাজটা সহজ করে দেয়। আপনি যখন রাশিয়ায় থাকবেন, তখন এই ভিন্নতাগুলো বুঝে নিলে আপনার অভিজ্ঞতা হবে আরও সমৃদ্ধ, আরও মানানসই।

এই দুই দেশের মিল-অমিলের ভেতর দিয়েই আপনি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেতে শুরু করবেন—এটা শুধু সাংস্কৃতিক বিনিময় নয়, এটা এক নতুন বন্ধনের যাত্রা।

Read more

The VI Finatlon Forum at Moscow Polytechnic University Brought Together Young Scientists from Russia and Abroad

The VI Finatlon Forum at Moscow Polytechnic University Brought Together Young Scientists from Russia and Abroad

On April 15, the VI Finatlon Forum concluded at Moscow Polytechnic University—an international scientific and practical conference dedicated to issues of sustainable development, investment, and financial risk. For more than 900 young scientists, students, graduate students, and educators, the forum served as a unique platform to showcase.   The plenary

By Fatema Tuz Zahra